মুন্সীগঞ্জ সদরের পশ্চিম মুক্তারপুরে ধলেশ্বরী নদীর তীরে অবস্থিত দেশের শীর্ষ সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ক্রাউন সিমেন্ট (MI Cement Factory PLC) অবৈধভাবে নদীর জমি দখল ও পরিবেশ দূষণের অভিযোগের মুখে পড়েছে। প্রায় ১৭ একর আয়তনের এ শিল্পপ্রতিষ্ঠান নদীর তীরঘেঁষে গড়ে উঠলেও অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি ধলেশ্বরীর প্রায় ৫ একর জমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে।
নদী রক্ষা কমিশনের তথ্য ও নির্দেশনা উপেক্ষিত
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তথ্যমতে, ক্রাউন সিমেন্ট ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্রাউন মেরিনার্স ডকইয়ার্ড মিলে প্রায় ৪৭০ শতাংশ নদীর জমি দখল করে আছে। ২০২৩ সালের এপ্রিলের মধ্যে এসব অবৈধ দখল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও স্থানীয় প্রশাসন বা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পক্ষ থেকে কার্যকর উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, দখলদাররা বিভিন্ন মামলাজট ও অপকৌশলের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে স্থাপনা বজায় রেখেছে।
উৎপাদন ও নৌপথ ব্যবহার
১৯৯৪ সালে যাত্রা শুরু করে ক্রাউন সিমেন্ট বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৫,৮০০ টন সিমেন্ট উৎপাদন করছে (বার্ষিক প্রায় ১.৭৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন)। ধলেশ্বরী নদীপথ ব্যবহার করে প্রতিদিন গড়ে ৫০০–৭০০ টন কাঁচামাল, যেমন ক্লিঙ্কার ও জিপসাম, জাহাজে আনা হয় এবং প্রস্তুত পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়।
বায়ুদূষণের ইতিহাস
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে সালফার ডাই অক্সাইড (SO₂) এবং স্থগিত কণার (SPM) মাত্রাতিরিক্ত নিঃসরণের কারণে ক্রাউন সিমেন্টকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সে সময় মাপা হয়েছিল ১,১১৩ m³ SO₂ (অনুমোদিত সীমা ৮০ m³) এবং ২,৭২৭ m³ স্থগিত কণা (অনুমোদিত সীমা ২০০ m³)। যদিও প্রতিষ্ঠানটি পরবর্তীতে প্রযুক্তি হালনাগাদ ও মনিটরিং সিস্টেম চালুর দাবি করেছে, স্থানীয়দের অভিযোগ, দূষণ এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বর্ষাকালে চোখে পড়ে কম।
বিআইডব্লিউটিএ (নারায়ণগঞ্জ) এর উপ-পরিচালক মো. মোবারক হোসেন মজুমদার বলেন,
“ক্রাউন সিমেন্টের এখানে আরসিসি সীমানা পিলার আছে। তার পরও যদি তারা নদীর জায়গা দখল করে থাকে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সরেজমিনে যাচাই করবো।
মুন্সীগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন,
“বর্ষাকালে ডাস্ট কম থাকে, তবে আগে বায়ুদূষণের কারণে তাদের একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের মেশিন দিয়ে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তবে জরিমানা কার্যকর হয় ঢাকা অফিসের মাধ্যমে।”
ক্রাউন সিমেন্টের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণেও আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছি এবং নিয়মিত মনিটরিং চালু আছে। নদীর জমি দখলের ব্যাপারে অবগত নই। এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই।”
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, “নদী দখল ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ধলেশ্বরীর নৌপথ ও জলজ জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।”