গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হলে সেদিন বিকালে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা ভবন ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় দুবৃর্ত্তরা। ভস্মীভূত হয়ে ধংসস্তুপে পরিণত হয় মুন্সীগঞ্জ পৌরভবন। সেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় দীর্ঘদিন পৌরসভা ভবনে রক্ষিত নাগরিকদের সকল দলিল-দস্তাবেজ। পুড়ে যায় দাপ্তরিক সকল কাগজপত্র। ভবনের সকল আসবাবপত্র, কম্পিউটার পুড়ে ধংসস্তুপে পরিণত হয় নাগরিকদের এই মৌলিক সেবা প্রতিষ্ঠান। বেশ কিছুদিন মুখ থুবড়ে পড়ে নাগরিক সেবা কার্যক্রম। বর্তমানে তিনটি অস্থায়ী দপ্তরে পরিচালিত হওয়ায় পৌরসভার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন বলেন, ইতিমধ্যেই আমরা পুড়ে যাওয়া ভবনটি পরীক্ষার জন্য বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে কোর কাটিং করিয়েছি এবং মুন্সীগঞ্জ এলজিইডি’র মাধ্যমে হেমার টেস্ট করিয়েছি। এই কাজে ব্যয় হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এখন ভবনটির রেট্রোফিট ডিজাইন ও এস্টিমেট করা হবে। রেট্রোফিট ডিজাইন এস্টিমেট করতে খরচ পড়বে প্রায় ১৭ লাখ টাকা। এরপরেই ভবনটির সংস্কার কাজ শুরু হবে। উল্লেখ্য, মুন্সীগঞ্জ পৌরভবনটি ২০০৪ সালে নির্মাণ করা হয়।
গত চার-পাঁচ মাস আগে বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং টিম এসে পুড়ে যাওয়া মুন্সীগঞ্জ পৌরভবন পরিদর্শন করে। তারা বিল্ডিংয়ের রড, বালু, সিমেন্টের নমুনা নিয়ে যায় পরীক্ষা করে দেখার জন্য। ২০০৪ সালে নির্মিত মুন্সিগঞ্জ পৌরভবনটির ক্ষতিগ্রস্ত অংশের কতটুকু রিপেয়ারিং করা যাবে, কতটুকু নতুন করে ভেঙে করতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে সম্পূর্ণ তথ্য বা ব্যবহার উপযোগী ডিজাইন তৈরি করে দিতে বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ারিং টিম ১৭ লক্ষ টাকা চেয়েছে। ইতিমধ্যে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সাড়ে চার লক্ষ টাকা তাদের দিয়েছে। এ মুহূর্তে ১৭ লক্ষ টাকা বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার টিমকে প্রদান করা পৌর কর্তৃপক্ষের পক্ষে সম্ভব নয়। মাসখানেক আগে পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বিষয়টি শিল্প ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খানকে জানালে তিনি জেলা এলজিইডি নির্বাহীর কৌশলী ও পিডব্লিউডি নির্বাহী প্রকৌশলীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন। এলজিইডি নির্বাহীর প্রকৌশলী ও পিডব্লিউডির নির্বাহী প্রকৌশলী পুড়ে যাওয়া পৌরভবন পরিদর্শন করে গেছেন। কিন্তু এলজিইডির টিমের ক্ষতিগ্রস্থ পৌরভবনের হেমার টেস্ট করা ব্যতিত আর কোনো কাজ করতে দেখা যায়নি। রেট্রোফিট ডিজাইনের কোনো অগ্রগতির দেখা মিলেনি। জেলা প্রশাসক জান্নাতুল ফেরদৌস দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সম্প্রতি এলজিইডি ও পিডব্লিউডির প্রধান প্রকৌশলী বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন। কিন্তু এলজিইডি ও পিডব্লিউডি’র কর্মতৎপরতা ও কার্যক্ষমতার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। প্রশ্ন ওঠেছে, এলজিইডি ও পিডব্লিউডি রেখে বারবার কেন ব্যয়বহুল বুয়েটের ইঞ্জিনিয়াদের একটি টিম দিয়ে কাজ করতে হবে?
এদিকে গত ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার কার্যক্রম তিন জায়গায় তিনটি অস্থায়ী অফিসে পরিচালিত হচ্ছে। হরগঙ্গা কলেজ রোডে নারীদের জন্য নির্মিত ফ্রেশ রুম অঙ্গনার দোতালায় পৌরসভার একটি দপ্তর, যেখানে সাধারণ শাখা অ্যাকাউন্ট শাখা ও প্রকৌশলী শাখার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পৌরসভার নাগরিকদের জন্ম নিবন্ধন ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ, স্বাস্থ্য শাখা, টিকা কার্যক্রম, বিভিন্ন প্রকার সনদ, লাইসেন্স শাখা, পানি শাখা, কর নির্ধারণ ও আদায়ের শাখার কার্যক্রম পুরাতন হাসপাতালের একটি ভবন থেকে পরিচালিত হচ্ছে। পৌরসভার প্রশাসক হচ্ছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মৌসুমী মাহবুব। তিনি বসেন মূলতঃ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে।
ছোট ছোট কার্যালয়ে বৃহৎ একটি পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় জায়গার সংকুলান ও লজিস্টিক সাপোর্টের সংকট দেখা দিয়েছে। জায়গার অভাবে সেবা গ্রহীতাদের বসার জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। শহরের তিন জায়গায় পৌরসভার অফিস থাকায় সেবা গ্রহীতাদের তিন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে। এতে পৌরসভার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, পৌর নাগরিকগণ পড়েছে মহাভোগান্তিতে।
পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, পৌরসভা ভবনে আগুন দেওয়ার পরে আমরা পৌরবাসীরাই ক্ষতির মুখে পড়েছি। এখন আমরা যেকোন সেবাই সঠিক সময়ে পাচ্ছিনা। একটা জন্ম নিবন্ধন করতে গেলেও দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। পৌরসভার কার্যক্রম দুইটি স্থানে হওয়ায় কোনো কাজ নিয়ে গেলেই এই অফিস ঐ অফিস দৌড়াতে হয়। এতে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছি আমরা পৌরবাসী।