মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধ নতুন করে সংঘাতে রূপ নিয়েছে। শ্রীনগরের দেউলভোগ এলাকায় দয়হাটা বায়তুল আমান জামে মসজিদে গত শুক্রবার মাগরিবের নামাজের সময় বিএনপির এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের হামলার ঘটনায় পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে। দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির এ দুইটি গ্রুপের কোন্দল এখন চরমে।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু
শ্রীনগরের দেউলভোগ এলাকায় জানাজায় অংশ নিতে গেলে বিএনপির প্রার্থী শেখ আব্দুল্লাহর সমর্থক উপজেলা যুবদলের বহিস্কৃত নেতা তরিকুল ইসলাম লোকজন নিয়ে তার পথরোধ করেন। পরে সপু মোটরসাইকেল যোগে সেখানে পৌছায়। জানাযা শেষে সেখান থেকে তিনি মাগরিব নামাজ পড়তে দয়হাটা বায়তুল আমান জামে মসজিদে গেলে তরিকুল ইসলাম ও তার অনুসারীরা মসজিদে সপুর সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় আবারও হামলার পুনরাবৃত্তি ঘটে। এতে সপুর দু’জন সমর্থক আহত হন। ঘটনার পরপরই শ্রীনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নেয়।
মসজিদে হামলার ঘটনায় সপু ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, “মসজিদে হামলা অমুসলিমরাও করে না। যারা হামলায় জড়িত এবং যারা তাদের পক্ষে সুপারিশ করবে সবাইকে গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
মনোনয়ন বঞ্চিত জেলা বিএনপির এক নেতা অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা ‘খসড়া’ মনোনীত প্রার্থীর মদদে চলে। পরদিন শনিবার ছনবাড়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং হামলাকে “পরিকল্পিত বলে আখ্যা দেয়।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে উত্তেজনা কয়েক সপ্তাহ ধরেই চলছে। জেলা বিএনপির সদস্য, সিরাজদীখান উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং আল-মুসলিম গ্রুপের চেয়ারম্যান শেখ মো. আব্দুল্লাহকে প্রার্থী ঘোষণা করার পর থেকেই মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
এদিকে চঅলতি মাসের (২২-নভেম্বর) শ্রীনগর স্টেডিয়ামে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে বৃহৎ সমাবেশ করেন কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মমিন আলী এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ হোসেন। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে হাজারো নেতাকর্মী সেখানে সমবেত হন। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভকারীদের একাংশ ঢাকা–মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে প্রশাসনের তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এসময় বিক্ষুব্ধ নেতারা অভিযোগ করে বলেন, দলের কঠিন সময়ে যারা রাজপথে ছিলেন, হামলা-মামলার চাপ সামলেছেন, সংগঠন ধরে রেখেছেন তাদের বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বিক্ষুব্ধ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি তোলেন।
অঅন্যদিকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শেখ মো. আব্দুল্লাহ (২৪- নভেম্বর) সিরাজদীখানের গোপালপুরে নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বলেন, “আমার বিরুদ্ধেও নির্ভয়ে লিখতে পারবেন সাংবাদিকরা। দলের কেউ অপরাধ করলে লিখবেন, প্রয়োজন হলে আমার ভুলও তুলে ধরবেন।”
তিনি জানান, মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই সব পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় করছেন।
“দল আমাকে যেহেতু দায়িত্ব দিয়েছে, সবার সাথে নিয়ে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে চাই বলেন তিনি।
‘খসড়া’ প্রার্থী আখ্যা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “দল চাইলে অন্য কাউকে প্রার্থী করলেও আমি তার হয়েও কাজ করব। দলীয় ঐক্যই আমাদের শক্তি।
এদিকে শেখ মো. আব্দুল্লাহর সমর্থনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহাসমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন,
“আসন্ন জাতীয় নির্বাচন রাষ্ট্র কাঠামোয় বড় পরিবর্তন আনবে।” তিনি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে সকলের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকার আহ্বান জানান।
তার অভিযোগ—আওয়ামী লীগ মাঠে নেই, এ সুযোগে সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক ধারার জন্য হুমকি। পাশাপাশি তিনি বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।