রাত প্রায় দুইটা। অসুস্থ প্রতিবেশীকে নিজের গাড়িতে করে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন মাদারীপুরের রবিউল আলম (৩০)। অন্ধকারের মধ্যে, নিঃস্তব্ধ এক্সপ্রেসওয়ের ষোলঘর এলাকায় হঠাৎই চোখে পড়ল একটি রাস্তা জুড়ে রাখা ব্যারিকেড। মুহূর্তেই বুঝতে পারলেন, কিছু একটা ঠিকঠাক নেই। কিন্তু সময় ছিল খুবই অল্প।
গাড়ির গতি কমাতেই রাস্তার পাশ থেকে ছুটে এলো ছয়জন ব্যক্তি—সবার হাতে দেশীয় ধারালো অস্ত্র। লক্ষ্য একটাই: গাড়ির যাত্রীদের থামিয়ে সর্বস্ব লুটে নেওয়া। একজন ডাকাত আচমকা গাড়ির ডান পাশের দরজায় আঘাত করতেই, শুরু হলো রবিউল আলমের বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষা।
তিনি এমন দক্ষতায় গাড়িটি দ্রুত রিভার্স গিয়ারে চালিয়ে বিপদের মুখ থেকে সরিয়ে আনেন, যেন রাস্তায় বহু বছরের অভিজ্ঞ একজন চালক গাড়ি চালাচ্ছেন। পেছন থেকে ধাওয়া করা ডাকাতরা তখনও দমেনি, একসময় ক্ষোভে একজন তার অস্ত্র ছুঁড়ে মারে গাড়ির দিকে। লুকিং গ্লাস ও বনেট কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রাণ রক্ষা পেয়েছিল ভিতরে থাকা মানুষগুলোর।
তবে, রবিউলের আরেকটি সিদ্ধান্ত ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেয়—গাড়ির সামনে লাগানো একটি ড্যাশ-ক্যাম। পুরো ডাকাতি চেষ্টার দৃশ্য এতে স্পষ্টভাবে ধারণ হয়ে যায়।
এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই হইচই পড়ে যায়। নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। মুন্সীগঞ্জ ডিবির একটি বিশেষ দল ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযান শুরু করে।
পরদিন দুপুরের মধ্যে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জ মডেল থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ঘটনার সাথে জড়িত পাঁচ ডাকাতকে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় সেই রাতে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র ও একই পোশাক। পুলিশের দাবি, ধৃতরা অপরাধ স্বীকার করেছে।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন—পটুয়াখালীর মোঃ কামাল ওরফে ‘সিএনজি কামাল’ (৪০), ইসমাঈল সরদার (৩৮), রাসেল মোল্লা (২৪), মাদারীপুরের রমজান বেপারী (২৭) ও লিমন মাতব্বর (২০)।
পুলিশ জানায়, এর আগেও কামাল ও তার দল একই এক্সপ্রেসওয়েতে একটি সশস্ত্র ডাকাতি করে। সেই ঘটনায়ও তারা গ্রেফতার হয়েছিল, তবে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার ফিরে আসে অপরাধে।
এ ঘটনা যেমন এক ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরেছে, তেমনই দেখিয়েছে একজন সাধারণ নাগরিকের সৃজনশীলতা, উপস্থিত বুদ্ধি এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের উদাহরণ—যা হতে পারে অনেকের জন্য শিক্ষা।