সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান থাকার পরও কেন প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিক মফস্বল এলাকায় তৈরি হলো? নিশ্চয়ই বাস্তব কারণ রয়েছে। রয়েছে এর প্রয়োজনীয়তা বা উপযোগিতা ও গ্রহণযোগ্যতা। তবে সান নিয়ে নানান প্রশ্ন রয়েছে। সিরাজদিখান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নানা সংকট ও অভাব অনুযোগের কারণে প্রাইভেট স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি হয়। সরকারি হাসপাতালে সকাল থেকে দুপুর ১-২ টা পর্যন্ত চিকিৎসকরা থাকেন এবং আগত রোগীরা চিকিৎসা পেয়ে থাকেন। এ সময়ে বাইরের রোগীরা এই সরকারি হাসপাতালে খুব বেশি জরুরী চিকিৎসা পায় না বা চিকিৎসা পাওয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে উঠে। জরুরী ব্যাপার বিশেষত প্রসূতি মায়েদের সিজার করার প্রয়োজন হলে সরকারি হাসপাতালে সকালে ভর্তি হতে হবে না হলে প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি প্রক্রিয়া এবং জটিলতা রোগীরা মুখোমুখি হয়। তাতে অনেকেই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী হয়ে উঠে না। ফলে প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যায় একটু স্বাচ্ছন্দের জন্য। অধিকাংশ প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা অনকলে গিয়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। সেখানে চিকিৎসকরা মোটা অংকের ফি পেয়ে যান। ফলে চিকিৎসকরাও বেশি আগ্রহী হন প্রাইভেট হাসপাতালে অপারেশন করাতে। তাছাড়াও সরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি থাকে। যার মধ্যে দরিদ্র বা নি¤œ মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যাই বেশি। এত রোগীকে ডাক্তাররা সময় নিয়ে চিকিৎসা সেবাও দিতে পারে না। ডাক্তারদের অনেক সময় ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। চাকুরির সময় ৮ ঘন্টা হলেও মফস্বল হাসপাতালে ডাক্তাররা বড়জোর ৪ ঘন্টা অবস্থান করেন। মফস্বল এলাকায় অধিকাংশ ডাক্তার কর্মস্থলে থাকেন না। তারা ঢাকায় চলে যান। ফলে কর্মস্থল থেকে যত তারাতারি বের হতে পারেন ততই বাড়ি ফিরা বা অন্য জায়গায় প্রাইভেট প্রেকটিস করার সময় সুযোগের তাড়া থাকে।
সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির অদূরে সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় পপুলার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ইছাপুরা চৌরাস্তার পাশেই এর অবস্থান। একটি মার্কেটের ১ম তলায় ১০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালটি ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করে। তবে এই পপুলার হাসপাতালে প্রধানত প্রসূতি মায়েদের সিজারিয়ান হয়ে থাকে।
সিরাজদিখান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কয়েক বছর ধরে প্রসূতি মহিলাদের সিজার করা শুরু হয়। তাও সীমিত সপ্তাহে দু-একটা। তবে যে সব রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনী ডাক্তারের চেক আপে থাকেন তারা সরকারি হাসপাতালে সিজার করার সুযোগটি পেতে পারেন। বাকি অনেক রোগী সময় ও নানাবিধ জটিলতার কারণে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে তাদের প্রাইভেট ক্লিনিক ছাড়া আর বিকল্প পথ নেই। গরীব রোগীররাও অনেক অর্থ ব্যয় করে মা ও নবজাতকের প্রাণ বাঁচাতে প্রাইভেট ক্লিনিকে সিজার করাতে বাধ্য হন।
ইছাপুরায় পপুলার হাসপাতালে বিশেষত চিকিৎক দ্বারা সিজারিয়ান, নরমাল ডেলিভারি, নাক-কান-গলা, গলব্লাডার, এপেন্ডিসাইড এর অপারেশন হয়ে থাকে। অপারেশনের আগের দিন রোগী ভর্তি হয় এবং অপারেশনের পরদিন অথবা দুদিন পর রোগীকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। এই হাসপাতালে সব রোগীর জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা চেম্বার করেন নির্দিষ্ট দিনে। হাসপাতালে চেম্বারে যে সব বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা আসেন তাদের কাছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সাধারণত এখানে অপারেশন প্রয়োজন হলে করানো হয়।
পপুলার হাসপাতালের জিএম. মঞ্জুর আলমের সঙ্গে কালে তিনি জানান, এখানে রোগী সর্বক্ষণ ভর্তি থাকেনা। অপারেশনের রোগীদের মধ্যে সিজারিয়ান রোগী ৪ দিন, ই.এন.টি. ২ দিন ভর্তি থাকে। শিশুদের সাময়িক চিকিৎসা দেয়া হয়, ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হয় না। দুইজন ডিউটি ডাক্তার আছেন, সিজার বা বিভিন্ন অপারেশন রোগীদের প্রয়োজন হলে অনকলে আনা হয়। সিজারের চার্জ নেয়া হয় ১৫-২০ হাজার টাকা। এখানে অধিকাংশ রোগী আসে প্রসূতি মায়ের সিজার করাতে। নরমাল ডেলিভারি কম হয়। তাছাড়াও নাক-কান-গলার অপারেশন হয়, গলব্লাডার ও এপেন্ডিসাইড এর অপারেশন হয়ে থাকে। কোন রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই হাসপাতালে। আমরা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দেখলে ঢাকা পাঠিয়ে দেই।
লেখক: স্বাস্থ্যকর্মী ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক