ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে চলাচলকারী যানবাহনের চালকদের গতিসীমাই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। চালকদের মাঝে গতিসীমা না মানার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সর্বউচ্চ গতিসীমা ৮০ কি:মি: প্রতি ঘন্টায়, সাব ওয়েতে ৪০ কি:মি: প্রতি ঘন্টায়। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। কেউ কেউ করছেন পঙ্গুত্ববরণ।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এক্সপ্রেসওয়ের ষোলঘড়, হাসারা, ওমপাড়া ও সমষপুর এসব এলাকায় দুর্ঘটনা বেশি ঘটে।
এদিকে হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে গত জানুয়ারি থেকে মে মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত এ এক্সপ্রেসওয়ে ২৮ টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রান হারায় ২৭ জন ও আহত হয় ২৯ জন। নিহতদের মধ্যে পুরুষ ২৩ জন ও নারী ৪ জন নিহত হয় । আহতদের মধ্যে পুরুষ ২৭ জন এবং নারী ২ জন আহত হয়। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, চালকরা অদক্ষ এবং তাদের ভয়ংকর প্রতিযোগিতাই এ দুর্ঘটনার অন্যতম কারন। তারা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন। এতে অকালে প্রাণ হারানোসহ পঙ্গুত্ববরণ করছেন অসংখ্য মানুষ।
স্থানীয় রুহুল আমিন বলেন, শুধু আর্থিক জরিমানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হাইওয়ে পুলিশ। এতে কমছে না দুর্ঘটনার হার। ফলে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। অনেকেই হাতপা হারিয়ে হচ্ছেন পঙ্গুও। আইনের কঠোর প্রয়োগ করা গেলে ব্যস্ততম এই সড়কে কমে আসছে দুর্ঘটনার হার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যাত্রী বলেন, ড্রাইভার ও হেল্পার দুইজনই নেশগ্রস্থ থাকে। তারা পর্যাপ্ত ঘুমায় না। দূর-পাল্লার গাড়িগুলোতে সাপোর্ট ড্রাইভারও দেখা যায়না। দীর্ঘ সময় গাড়ী চালানোর কারনে তাদের ভেতর ক্লান্তি চলে আসে। একপর্যায়ে সেই সব গাড়িগুলো দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে প্রাণ যায় পথচারীও যাত্রীদের।
সর্বশেষ গত ৮-মে বৃহস্পতিবার দুপুর একটার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখানের নীমতলা এলাকায় থেমে থাকা রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স ও দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের চাপা দেয় গোল্ডেন পরিবহনের একটি বাস। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ১জনের,পরে গুরুত্বর অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় আরো ৪ জন। পরে বিকেল ৫ টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আশপাশ এলাকা থেকে ঘাতক বাসের হেল্পার ও সুপারভাইজার কে গ্রেফতার করে হাইওয়ে পুলিশ।
এছাড়াও গত (১৭-এপ্রিল) বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার দিকে বরিশালের উদ্দেশে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে ৬০ জন যাত্রী নিয়ে ছেড়ে আসলে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-মাওয়া সড়কে উঠলে চালক বেপরোয়া গতিতে চালানো শুরু করে। এক্সপ্রেসওয়ের শ্রীনগরের সমষপুর এলাকায় প্রথমে একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে ধাক্কা লাগে এতে বাসটির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এর ২ মিনিট পর কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষে হয় বাসের ছাদ বডি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়।
এ ঘটনায় আহত হন অন্তত জন ৮ যাত্রী। যাত্রীরা ভয়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করে। চালককে বাস থামাতে অনুরোধ করলেও সে না থামিয়ে আহত যাত্রীদের নিয়ে ছাদবিহীন বাস চালিয়ে চলে যায়। চালক দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে হাইওয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়ী দেখে ছাদবিহীন চলন্ত বাস চালিয়ে ৫ কিলোমিটার দূরের পদ্মা সেতু উত্তর থানার লৌহজংয়ের কুমারভোগ এলাকায় চলে যায়। এ সময় আহত যাত্রীদের ” বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার “শুনে ছাদবিহীন বাসটি আটক করে জনতা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে হাইওয়ে পুলিশ ও শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
হাসারা হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, ঢাকার যানযট পার হয়ে যখন ড্রাইভাররা এক্সপ্রেসওয়েতে আসেন তখন তাদের গতিসীমা বেড়ে যায়। এছাড়াও যাত্রীরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। এতেই ঘটে বিপত্তি।
মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমানোর জন্য তিনি মতামত দিয়ে আরও বলেন, মহাসড়কে দূর্ঘটনা ও অপরাধ কমানোর লক্ষে এক্সপ্রেসওয়েতে স্থাপনকৃত গাড়ীর গতি নিয়ন্ত্রন ক্যামেরার ব্যবহার ও সিসি ক্যামেরা সচল করতে হবে। সেই সাথে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধসহ আব্দুল্লাহপুর, ছনবাড়ী টোল প্লাজা চালু করতে হবে। এ পদক্ষেপগুলো চালু হলেই পদ্মা সেতু এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দূর্ঘটনা ও দূর্ঘটনায় মৃত্যু ও অপরাধ মূলক কর্মকান্ড কমানো সম্ভব হবে।